Jibananander Upanyas O Manosamikshanbad
No Thumbnail Available
Date
Authors
Journal Title
Journal ISSN
Volume Title
Publisher
Abstract
জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যে কবি হিসাবে পরিচিত হলেও কথা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ প্রশংসার দাবি রাখে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত জীবনানন্দ দাশ বিদেশি সাহিত্য ও সাহিত্যতত্ত্ব দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত ছিলেন, যা তাঁর লেখাতে প্রকাশ পেয়েছিল। তাঁর উপন্যাসগুলি তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশের মুখ না দেখলেও পরবর্তী কালে সেই উপন্যাসগুলি পাঠক মহলে সমাদর লাভ করে। তাঁর উপন্যাসগুলি সময়ের দিক থেকে স্বতন্ত্র ছিল। কথনভঙ্গি, গদ্যশৈলী, পরিবেশনা--সব কিছুতেই উপন্যাসগুলির মধ্যে এক ভিন্ন রূপরীতি চোখে পড়ে। তার সঙ্গে পাশ্চাত্য তত্ত্বের সমারোহ তার উপন্যাসে চোখ এড়ায় না। এখানে আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রদত্ত মনঃসমীক্ষণবাদ। সাহিত্য সমাজ ব্যতীত অসম্ভব, তাই সবার আগে সমাজের চোখ দিয়ে সাহিত্যকে বিচার করলে সেই সাহিত্যের এক ভিন্ন মাত্রা পাওয়া যায়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে ‘জীবনানন্দ দাশ ও সমসাময়িক দেশ কাল সাহিত্য’ শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে কালের নিরিখে জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস ও তাঁর সমকাল আলোচনা করা হয়েছে। অধ্যায়টি তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত, ‘জীবনানন্দের আবির্ভাব কাল ও সমকালীন ঔপন্যাসিক’ শীর্ষক প্রথম পরিচ্ছেদে জীবনানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তাঁর সমকালের শিল্পীদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ বর্ণিত। ‘সমকালীন ইতিহাসপ্রবাহ ও সাহিত্য’ পরিচ্ছেদটিতে সেই সময়ের ইতিহাস ও সাহিত্যের আলোচনা করা হয়েছে। ‘সমসাময়িকতার পটে জীবনানন্দের উপন্যাস’ পরিচ্ছেদটিতে জীবনানন্দের উপন্যাসে সমকালের অবস্থান বর্ণিত। দ্বিতীয় অধ্যায়ে পাশ্চাত্য তত্ত্ব হিসাবে মনঃসমীক্ষণবাদের উৎপত্তি ও তার বিস্তার আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টিকে বিস্তারিতভাবে জানার উদ্দেশ্যে অধ্যায়টি তিনটি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে। ‘মনঃসমীক্ষণবাদের উন্মেষ প্রহর প্রাচ্য-পাশ্চাত্য’ শীর্ষক প্রথম পরিচ্ছেদটি ফ্রয়েড পূর্ববর্তী সময়ে মনের বিশ্লেষণ যে রূপে এসেছে, তা বিস্তারিতভাবে আলোচিত। পরিচ্ছেদটি ‘প্রাচ্য পর্ব’ ও ‘পাশ্চাত্য পর্ব’ এই দুই ভাগে বিভক্ত। ‘মনঃসমীক্ষণবাদী তত্ত্ব ও আন্দোলন’ নামাঙ্কিত দ্বিতীয় পরিচ্ছেদটিতে ‘মনঃসমীক্ষণবাদ’ বিষয়টির বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা হয়েছে। ‘জীবনানন্দের সৃষ্টিকর্ম : ব্যক্তি ও মন’ শীর্ষক তৃতীয় পরিচ্ছেদটিতে জীবনানন্দ নিজে এই তত্ত্ব দ্বারা কতটা প্রভাবিত ছিলেন, তা আলোচিত। জীবনানন্দ দাশের পূর্বে বাংলা উপন্যাসে মনঃসমীক্ষণবাদী কোনো লক্ষণ দেখা গেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে ‘জীবনানন্দ পূর্ববর্তী ঔপন্যাসিক ও জীবনানন্দ’ নামাঙ্কিত তৃতীয় অধ্যায়টির অবতারণা। বাংলা কথাসাহিত্য নির্মাণের পূর্বে যেহেতু পাশ্চাত্য কথাসাহিত্যের আগমন তাই এই অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে ফ্রয়েড পূর্ববর্তী সময়ে ‘মন’ সাহিত্যে কী রূপে এসেছে তা ‘পাশ্চাত্য সাহিত্য : প্রাক্ ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্ব’ শীর্ষক প্রথম পরিচ্ছেদে বর্ণিত। ‘বাংলা উপন্যাসের আদিপর্ব : মনোবৃত্তির অগোচরে’ নামক দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বাংলা উপন্যাসের আদি সময় আলোচিত, তবে তার পরবর্তী অংশ ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় থেকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামাঙ্কিত তৃতীয় পরিচ্ছেদটি জীবনানন্দের পূর্ববর্তী ঔপন্যাসিকদের উপন্যাসে থাকা মনঃসমীক্ষণের অঙ্কুরের নির্দেশ দেয়। ‘জীবনানন্দের উপন্যাস ও মনঃসমীক্ষণবাদ’ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়টি এই গবেষণাপত্রের প্রধান অধ্যায়। ফ্রয়েড প্রদত্ত তত্ত্বানুসারে অধ্যায়টি তিনভাগে বিভক্ত, ‘নরনারীর সম্পর্কের জটিল এষণা : লিবিডো, বিকৃতকাম ও লিঙ্গগত ভাবনা এবং জীবনানন্দের উপন্যাস’ শীর্ষক প্রথম পরিচ্ছেদটি এই তিনটি অংশে বিভক্ত। জীবনানন্দের উপন্যাসের চরিত্র সহযোগে বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পরবর্তী ‘স্বপ্ন : অবদমন ও অবদমিত ইচ্ছা চরিতার্থতার নিষিদ্ধ দুনিয়া এবং জীবনানন্দের উপন্যাস’ শীর্ষক দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ও ‘আগ্রাসীপ্রিয়তা বনাম আগ্রাসীবিমুখতা : সৃষ্টি ও ধ্বংসের উপাখ্যান এবং জীবনানন্দের উপন্যাস’ শীর্ষক তৃতীয় পরিচ্ছেদটিতে একইভাবে জীবনানন্দের উপন্যাসের চরিত্রগুলি সহযোগে ফ্রয়েড প্রদত্ত ভাবনাগুলির পদচালনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা জানি জীবনানন্দ দাশ তাঁর উপন্যাসগুলি ১৯৩১ (‘পূর্ণিমা’) থেকে ১৯৪৮ (‘বাসমতীর উপাখ্যান’) সালের মধ্যে রচনা করলেও উপন্যাসগুলি প্রকাশ পায় অনেক পরে। কিন্তু সেই সময় ব্যবধানে মনঃসমীক্ষণবাদ তত্ত্বটি তো তত্ত্ববিশ্বে স্থির থাকেনি, বরং আরো বিবর্ধিত হয়েছে, ফ্রয়েড পরবর্তী সময়ে নব্য মনঃসমীক্ষণবাদীরা এসেছেন আরো নতুন নতুন ভাবনার সম্ভার নিয়ে। তাঁদের ভাবনা আরো বহুমুখী ও ভিন্ন ভিন্ন। তাই জীবনানন্দ পরবর্তী ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তত্ত্বের ক্ষেত্রে বিস্তর ফারাকের দেখা যাবার কারণে জীবনানন্দের উপন্যাসের রচনাকাল ধরে জীবনানন্দ পরবর্তী ঔপন্যাসিক হিসেবে সমরেশ বসু, বিমল কর ও দিব্যেন্দু পালিতকে গ্রহণ করা হয়েছে, এ কথা স্পষ্ট যে তাঁরা জীবনানন্দের উপন্যাস পড়েননি, কারণ তা তখনো প্রকাশের মুখ দেখেনি, কিন্তু ফ্রয়েডের প্রভাব তাঁদের লেখায় দেখা যায়, তাই ফ্রয়েড প্রদত্ত তত্ত্ব ভাবনার কথা মাথায় রেখে ‘জীবনানন্দোত্তর বাংলা উপন্যাসে মনঃসমীক্ষণবাদ ও জীবনানন্দ’ শীর্ষক পঞ্চম অধ্যায়ে তাঁদের উপন্যাসে মনঃসমীক্ষণবাদের প্রভাব আলোচিত। জীবনানন্দের উপন্যাসের চরিত্রগুলি সহযোগে একপ্রকার তুল্যমূল্য আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শেষে ষষ্ঠ অধ্যায়ের নাম ‘উপসংহার’, এখানে গবেষণা কর্মের সামগ্রিক মূল্যায়ন আলোচিত। একদম শেষে আছে ‘গ্রন্থপঞ্জি’। এই গবেষণায় জীবনানন্দ দাশের উপন্যাসগুলিকে নতুন দৃষ্টিতে পাঠ করেছি, মূলত বিশ্লেষণ-পদ্ধতিটি এখানে প্রকৃত মাধ্যম।
Description
Keywords
Jibanananda Das, Bengali Novels, Psychoanalytical theory, Sigmund Freud, Literary Theory and criticism, Literature