Bharatiya Aitihye O Sahitye Shiva-Sanskritir Baichitrya O Bibarton (Sindhu Sobhyota Theke Oshtadosh Shatak)

Abstract
আমাদের গবেষণার বিষয় ‘ভারতীয় ঐতিহ্যে ও সাহিত্যে শিব-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও বিবর্তন (সিন্ধু সভ্যতা থেকে অষ্টাদশ শতক)’। এই কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখাতে চেয়েছি ভারতীয় চেতনায় ও সাহিত্যে যেভাবে শিবকে পাই তার বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ও ঐতিহ্যের পথ ধরে তার ক্রমবিবর্তনের রূপরেখাটি। বিশেষত, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে শিবকে যেভাবে পাওয়া যায় তা কীভাবে ক্রমান্বয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে অন্বেষণের চেষ্টা করেছি আমরা। এই গবেষণাকে প্রস্তাবনা ও উপসংহার বাদ দিয়ে মোট আটটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। অধ্যায়গুলি আলোচনার সুবিধার্থে একাধিক পরিচ্ছেদে বিভক্ত। আলোচনার প্রবেশক অংশ হিসাবে ‘প্রস্তাবনা’য় গবেষণাকর্মের অভিমুখটি সংক্ষেপে বলা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘সিন্ধুপারে আদিযোগী : প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যে শিবচেতনার উৎস’। অধ্যায়টি তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। সিন্ধু সভ্যতার ‘পশুপতির’ ধারণা সেখানে কীভাবে ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠল তা সেখান থেকে প্রাপ্ত একাধিক সিলের উপর ভিত্তি করে সন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সিন্ধু সভ্যতায় উৎপাদন সংস্কৃতির সঙ্গে ও যোগের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার দিকটিও স্পষ্ট করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বৈদিক সাহিত্যে রুদ্র : রূপ ও রূপান্তর’। অধ্যায়টিকে দু’টি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে। প্রাগার্য সভ্যতা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে বৈদিক রুদ্রের ধারণা গড়ে উঠল সেই বিষয়েই বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। বৈদিক রুদ্রের যে দিকগুলি মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে শিবের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় সেগুলিও প্রসঙ্গক্রমে দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে বৈদিক রুদ্রের সঙ্গে অন্যান্য আর্য দেবতার সংযোগ অন্বেষণের প্রয়াস করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম ‘সংস্কৃত সাহিত্যে রুদ্র-শিবের ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য’। অধ্যায়টিকে চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করা হয়েছে। এই অধ্যায়ে বৈদিক রুদ্র কীভাবে সামাজিক ও তাত্ত্বিক চেতনার মধ্যে দিয়ে বিবর্তিত হয়ে পৌরাণিক ও মহাকাব্যিক শিবকেন্দ্রিক চেতনা ও কাহিনির উদ্ভব হয়েছে তা অনুসন্ধান করা হয়েছে। সংস্কৃত ধ্রুপদী কাব্যে নাটকে তাঁর স্বরূপ, তন্ত্র ও নাথসাহিত্যে তাঁর অবস্থান বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই অধ্যায়টিতে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের শিবচেতনা মূলত লৌকিক হলেও পুরাণ, তন্ত্র কিংবা নাথপন্থার প্রভাব সেখানে যথেষ্ট। তাই সংস্কৃত সাহিত্যের শিব সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণের সূত্রে প্রসঙ্গক্রমে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে উল্লিখিত সেই বিষয় সংক্রান্ত দিকগুলিও তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ের শিরোনাম ‘সংস্কৃত ও প্রাকৃত প্রকীর্ণ কবিতাবলীতে শিবপ্রসঙ্গ’। অধ্যায়টিকে দু’টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকীর্ণ কবিতার সংকলন গ্রন্থ যেমন— ‘প্রাকৃতপৈঙ্গল’, ‘সদুক্তিকর্ণামৃত’, ‘সুভাষিতরত্নকোষ’ ইত্যাদি অবলম্বনে সংস্কৃত ও প্রাকৃত প্রকীর্ণ কবিতায় শিবের পৌরাণিক ও মানবিক দিক আলোচনা করা হয়েছে। প্রকীর্ণ কবিতাবলীতে কবিরা শিবকে যেভাবে মাটিঘেঁষা দরিদ্র জীবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়েছেন অবশ্যই তাঁর অনার্য, ব্রাত্য জীবনের সঙ্গে সংযোগের বিষয়টি স্মরণে রেখে তা পরবর্তীকালের বাংলা মঙ্গলকাব্যকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল তা আলোচনা করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। পঞ্চম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে শিবকথার বৈচিত্র্য ও বিবর্তন’। অধ্যায়টিকে চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করা হয়েছে। বাংলা মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য, নাথ সাহিত্য ও শাক্ত পদাবলীতে কীভাবে আমরা শিবকে পাওয়া যায় তা অন্বেষণ করা হয়েছে এই অধ্যায়টিতে। একইসঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচিত বৈদিক ও পৌরাণিক রুদ্র-শিবের ধারণা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে তাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই অধ্যায়টিতে। এই শিবের উপর তান্ত্রিক চেতনা ও লোকঐতিহ্যগত চেতনার প্রভাব নিরূপণ করা হয়েছে এই অধ্যায়টিতে। মনসামঙ্গল কাব্যের ক্ষেত্রে বিজয় গুপ্ত, নারায়ণ দেব, তন্ত্রবিভূতি, জগজ্জীবন ঘোষাল, বিপ্রদাস পিপিলাই, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ এই ছ’জন কবির কাব্য অবলম্বনে; চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের ক্ষেত্রে দ্বিজ মাধব, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, মানিক দত্ত এই তিন কবির কাব্য অবলম্বনে; ধর্মমঙ্গল ও অন্যান্য ধর্মঠাকুর কেন্দ্রিক সাহিত্য যেমন— ‘শূন্যপুরাণ’, ‘ধর্ম্মপূজাবিধান’, রূপরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তী, মানিকরাম গাঙ্গুলির ধর্মমঙ্গল কাব্য অনুসারে, ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য অনুসারে, রামকৃষ্ণ কবিচন্দ্রের শিবায়ন, দ্বিজ রতিদেবের ‘মৃগলুব্ধ’, রামরাজার ‘মৃগলুব্ধ সংবাদ’, রামেশ্বর ভট্টাচার্যের শিবায়ন কাব্য অনুসারে পৌরাণিক ও লৌকিক শিবের নানা দিক বিশ্লেষিত হয়েছে। অনুবাদ সাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’, ‘কাশীদাসী মহাভারত’ ও মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্য অবলম্বনে শিব চরিত্রে পৌরাণিকতা ও লৌকিকতার অনুসরণ আলোচনা করা হয়েছে। নাথসাহিত্যের ক্ষেত্রে ‘গোরক্ষ-বিজয়’ কাব্যের সৃষ্টিপালায় ও নাথধর্মের আদিগুরু হিসেবে এবং ‘হাড়মালা’ কাব্য অবলম্বনে যোগসাধনার প্রবক্তারূপে শিবকে দেখানো হয়েছে। অষ্টাদশ শতকের দু’জন শাক্ত পদাবলীকার রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্তের পদ অবলম্বনে শিবের চরিত্রকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে লোকঐতিহ্য ও তান্ত্রিক ঐতিহ্যের অনুসরণে। ষষ্ঠ অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বাংলার লোকঐতিহ্যে শিব : লোকসাহিত্যে ও রূপবৈচিত্র্যে’। এই অধ্যায়টিকে দু’টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করা হয়েছে। এই অধ্যায়ে বাংলার লোকসাহিত্যে অর্থাৎ প্রবাদে, লোকগানে, ছড়ায়, ব্রতকথায় শিবের অবস্থান ও অনুষঙ্গ দেখানো হয়েছে। এছাড়া সমগ্র বাংলা জুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেত্রসমীক্ষার মাধ্যমে শিবকেন্দ্রিক যে সমস্ত লৌকিক রূপের সঙ্গে (মহাকাল, মহারাজ, ত্রিনাথ, সন্ন্যাসী ঠাকুর ইত্যাদি) ও স্থানবিশেষে শিবকেন্দ্রিক লৌকিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে সেগুলির পরিচয় স্পষ্ট করা হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘প্রাদেশিক ভারতীয় সাহিত্যে শিবশঙ্কর : ঐতিহ্যের অনুসন্ধান’। এই অধ্যায়টিকে পাঁচটি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিবকেন্দ্রিক সাহিত্যের প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে পাঁচটি ভাষাকে নির্বাচন করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাদেশিক সাহিত্যের সঙ্গে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা ও প্রভাব নির্ধারণের চেষ্টাও করা হয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘আধ্যাত্মিক চেতনা ও স্থাপত্য-ভাস্কর্যে শিবময় ভারতবর্ষ’। অধ্যায়টিকে দু’টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় আধ্যাত্মিক জীবনে শিবের সম্পৃক্ততার স্বরূপটি নির্ধারণ করতে গিয়ে ভারতবর্ষের বিখ্যাত শিবস্থানগুলির উল্লেখ ও সেই স্থানগুলির পৌরাণিক অনুষঙ্গের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই অধ্যায়টিতে। ভারতীয় অধ্যাত্মজীবনে তিনি এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে একইসঙ্গে ভারতীয় স্থাপত্য-ভাস্কর্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নানা বৈচিত্র্যময় দিক। বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে সেই বিষয়গুলি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই অধ্যায়ে। সেই উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান যেমন— ইলোরা, এলিফ্যান্টা, ভুবনেশ্বর, মহাবলীপুরম, খাজুরাহো ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থানে এবং একাধিক সংগ্রহশালায় গিয়ে ক্ষেত্রসমীক্ষা করা হয়েছে। শেষে রয়েছে ‘উপসংহার’। এই অংশে আমাদের গবেষণাকর্মের সামগ্রিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। এরপর রয়েছে একটি ‘পরিশিষ্ট’ অংশ। এখানে গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত চিত্রগুলি সংযুক্ত হয়েছে। সিন্ধু সভ্যতায় শিবের উৎস সন্ধানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সিলগুলির চিত্র ও ক্ষেত্রসমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত চিত্রগুলি এই অংশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গবেষণাকর্মের শেষে রয়েছে গ্রন্থপঞ্জি। প্রাগার্য যুগ থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ভারতীয় ঐতিহ্য ও সাহিত্যে ক্রমান্বয়ে শিবের বিবর্তনকে অনুসন্ধান করাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য।
Description
Keywords
Arts and Humanities, Arya, Culture, Evolution, Indian, Literature, Pragarya, Shiva, Tradition
Citation